বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:কলকাতার ফুলবাগানে শাশুড়িকে গুলি করে খুন করে আত্মঘাতী জামাই। ঘটনাটি ঘটে সোমবার শেষ বিকেলের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। আত্মঘাতী জামাই হলেন অমিত আগরওয়াল। বয়স ৪২। শাশুড়ির নাম ললিতা ঢনঢনিয়া। বয়স ৬০। কিন্তু শাশুড়িকে খুন করে কেন জামাই আত্মঘাতী হলেন, তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় মহানগরীতে। ছুটে আসেন ফুলবাগান থানার পুলিশ কর্তারা। আসেন কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারাও। তদন্ত শুরু করেন।
তদন্ত করতে গিয়েই ফুলবাগানের সেই ফ্ল্যাট থেকে অমিতের একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে পুলিশ। সেই নোট দেখে চোখ কপালে ওঠে সকলের। শাশুড়িকে খুন করার আগে অমিত আরও একটি খুন করে এসেছেন সুদূর বেঙ্গালুরুতে। যাঁকে তিনি খুন করে এসেছেন, তিনি তাঁর স্ত্রী শিল্পী। সেই সুইসাইড নোট থেকে জানা যায়, শিল্পীর সঙ্গে অমিতের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। আর এই বিচ্ছেদ ঘিরেই দু’জনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করে বেঙ্গালুরু পুলিশের সঙ্গে। তারা পুরো ঘটনাটি তাদের জানায়। পাশাপাশি অমিত এবং তাঁর শাশুড়ির মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বেঙ্গালুরু পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট ঠিকানায় ছুটে যায়। সেখানকার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে শিল্পীর মৃতদেহ। তার পর কলকাতা পুলিশকে শিল্পীর মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করে। বেঙ্গালুরু পুলিশের ধারণা, শিল্পীকে সম্ভবত শনি অথবা রবিবার খুন করা হয়েছে। মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টারও অনেক বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় শিল্পীর দেহে পচন ধরে গিয়েছিল। দুর্গন্ধও বের হচ্ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর তারা আরও জানিয়েছে, সম্ভবত শিল্পীকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। বেঙ্গালুরু পুলিশ শিল্পীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিত এবং শিল্পী দু’জনেই পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। দু’জনেই বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। তবে আলাদা ফ্ল্যাটে। তবে শিল্পীর বাবা সুভাষ ঢনঢনিয়া পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি শিল্পীর মাকে নিয়ে থাকেন ফুলবাগানের রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের অভিজাত রামেশ্বরম আবাসনে। ঘটনার সময় তিনি তিনতলার ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন। এদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সেখানে আসেন অমিত। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সুভাষের সঙ্গে অমিতের ঝামেলা চলছিল। এদিনও দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। তখন শিল্পীর মা ললিতা ছুটে আসেন ঝামেলা থামাতে।
কিন্তু পকেট থেকে ছ’ঘড়ার রিভলবার বের করে অমিত গুলি করেন শাশুড়িকে। ভয় পেয়ে ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন সুভাষবাবু। আশ্রয় নেন পাশের ফ্ল্যাটে। সেই ফ্ল্যাট থেকেই ফুলবাগান থানায় ফোন করে ঘটনার কথা জানানো হয়। পুলিশ এসে ফ্ল্যাট খুলে দেখে ললিতা এবং অমিতের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। দু’জনের কারও শরীরেই প্রাণ ছিল না। ওই ঘর থেকেই অমিতের একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সুভাষবাবুর একটি ছেলেও আছে। তিনি অন্য রাজ্যে চাকরি করেন। তাঁকে ঘটনার খবর জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরে অমিত ও শিল্পীর মধ্যে কোনও সম্পর্ক ছিল না। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল।